স্বাধীনতার ৭৫ বছর অতিক্রম করে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র আজ স্বঘোষিত হিন্দুত্ববাদী সরকার দ্বারা পরিচালিত। যদিও শাসকের হিন্দুত্ববাদী রূপে প্রকাশিত হওয়ার ঘটনা আজ নতুন নয়, তবে সেটা একদিনে ঘটেনি । বিগত কয়েকটি বছর ধরে ফ্যাসিবাদী সরকারের কার্যকলাপ চোখে পড়ার মত , শাসক বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহন করে নিজের সম্পত্তি সহ থাকার জায়গাটুকু খুইয়েছে সংখ্যালঘু তথা মুসলিম সমাজের একাংশ । যোগী রাজ্যে গর্বের সহিত সেই খবর জনসমক্ষে জানানো হয়েছে এবং তার সাথে সেটা আইনি বৈধতাও পেয়েছে । এরূপ কার্যকলাপ কার্যকলাপ শাসকের ফ্যাসিবাদী মনোভাবের প্রকাশ ঘটায় যার আলোচনা জনসমক্ষে তুলে আনা একান্ত প্রয়োজন।
📜[•ফ্যাসিবাদ কি?•] :-
সোজা কথায় ফ্যাসিবাদ বলতে দমনমূলক রাজনৈতিক পন্থার উগ্র রূপ কে বোঝায় । ইতিহাস ঘেঁটে দেখলে ফ্যাসিবাদের সঙ্গে পুঁজিবাদী শাসনব্যবস্থার গভীর সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়। তাই ফ্যাসিবাদ কে শুধুমাত্র দমনমূলক পন্থা বললে ভুল হয় বরং বলা যেতে পারে পুঁজিবাদী শাসনব্যবস্থায় পুঁজিপতি রা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয় সেই অসুবিধা দুর করার এক রাজনৈতিক হাতিয়ার হলো ফ্যাসিবাদ । এই সঙ্গে ফ্যাসিবাদের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট যেমন - 'সামাজিক বৈষম্যতা , ধর্মান্ধতা , বিদ্বেষ ও নানাপ্রকার এর হিংসা ' কে উল্লেখ করতে হয় ।
বিংশ শতাব্দীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে ইউরোপের বহু দেশ যেমন - বেনিতো মুসোলিনির ইতালি, হিটলারের জার্মানি, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া তে এই পথে ফ্যাসিবাদের উত্থান হয়েছিল । যদিও উল্লিখিত দেশগুলোতে ফ্যাসিবাদের প্রকৃতি ছিল দেশভিত্তিক ভিন্নরকম। এই সব দেশে ফ্যাসিবাদের উৎসের বৈচিত্র্য থাকলেও পুঁজিবাদী ভাবধারার দিক দিয়ে প্রত্যেক দেশে একইরকম প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। সবক্ষেত্রে দেখা যায় ব্যাক্তিগত মালিকানা নির্ভর পুঁজিবাদী সম্পত্তি ফ্যাসিবাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। সম্পদের একচেটিয়া ব্যক্তিগত মালিকানার ফলে সমাজে সংকটের সৃষ্টি হয় , আর সংকট সৃষ্টি করে ক্ষমতায় টিকে থাকাই হলো ফ্যাসিবাদ এর উদ্দেশ্য। আরেকটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য যা সকল ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে লক্ষ্য করা গেছে তা হলো জাতিগত ব ধর্মীয় সংখ্যালঘু দের অধিকার হরণ এবং নির্যাতন। উগ্র জাতীয়তাবাদ দিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকার সমাজ পরিচালনা করে থাকে । উপরুক্ত দুটি সাধারণ বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে তৎকালীন বিশ্বের দুই প্রধান দেশ জার্মানি ও ইতালি কে পর্যালোচনা করা যায় । ১৮৭০ এর দিকে শিল্প বিপ্লবের সময় হিটলারের জার্মানী ইউরোপের অন্যান্য পুঁজিবাদী দেশগুলোকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে জাতীয়তাবাদী আদর্শের মহিমায় একচেটিয়া পুজিকরণের পথে অগ্রসর হয় এবং সেই সঙ্গে উঠে আসে কতৃত্ববাদী পুঁজিবাদ। মুসোলিনির ইতালিতে সমন্ততন্ত্রের ছোঁয়ায় দক্ষিণপন্থী শক্তি প্রথমে ইউরোপ এবং পরে সারা বিশ্বে সমাজতন্ত্রের পরিবর্তে ক্যাথলিক চার্চের কতৃত্ব প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিল।, এবং সামন্তপ্রভু দের পুঁজির বিকাশে সহযোগিতা করেছিল ।
📜[•ভারতীয় ফ্যাসিবাদ•]:-
উল্লিখিত সকল বৈশিষ্ট দ্বারা এবার ভারতবর্ষের স্বরূপ আলোচনা করা যায়। বিশ্বায়িত পুঁজিবাদের নামে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি ফ্যাসিবাদকে হাতিয়ার করে সাম্রাজ্যবাদের পথ মসৃণ করছে, ভারতবর্ষ তার ই একটা অংশ। ভারতীয় ফ্যাসিবাদের পরিচালক তথা শাসক দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকেদের জাতীয়তাবাদের পাঠ মন্ত্র পড়িয়েছে। যাতে করে তারা আর্থিক সংকট ভুলে হিংসা আর বিদ্বেষ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ভারতীয় ফ্যাসিবাদ ভ্রান্ত জাতীয়তাবাদের নেশায় মগ্ন হয়ে বিভাজনের রাজনীতিতে টিকে আছে। ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী সরকার তার প্রতিটা পদক্ষেপ পুঁজিবাদের পথ প্রশস্ত করছে। এই ফ্যাসিবাদী সরকার রাষ্ট্রের দমনমূলক হাতিয়ারের সাহায্যে বিরোধীদের উপর আক্রোশ নামিয়ে আনে। সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠদের ভুয়ো প্রয়োজনকে কোনো বৃহৎ এজেন্ডা রূপে প্রকাশ করে। কিন্ত এই শাসনে পুঁজিবাদী সংকট কে কখনো জনগণের সামনে প্রকাশ করা হয় না। বরং রাজনৈতক সমস্যা মেটাতে এবং পুঁজিপতিদের স্বার্থে পুলিশ এবং সামরিক বাহিনীকে লেলিয়ে দেওয়া হয় সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে। ভারতের মনুনাদি সরকার তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পরিচালনা করার জন্য আর্থিক সংকট সৃষ্টি করে এবং কর্মসংস্থান কে সংকোচন করে সামাজিক বৈষম্য, ধর্মান্ধতা, বিদ্বেষ ও হানাহানির পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। সংখ্যালঘুদের উপর নেমে আসে হিংসা ও বৈষম্য । এইসব মৌলিক বৈশিষ্ঠ ভারতীয় ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থায় নিঃসন্দেহে লক্ষ্য করা যায়।
এরূপ সন্ধিক্ষণে বলা যায় ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থাকে হাতিয়ার করে ভারতবর্ষ আসলে পরিচালিত হচ্ছে কিছু সংখ্যক কর্পোরেটদের হতে এবং তাদের সুরক্ষার দায় রয়েছে রাষ্ট্র - দাস সেনাবাহিনীর ওপর। ভারতকে একটি সর্বাত্মক ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করতে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি ও আরএসএস নিজেদের রাষ্ট্রসম করে তুলতে চাইছে। গণমাধ্যমকে ব্যবহার করছে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে। ফ্যাসিবাদের মুখোশ পড়ে জনসমক্ষে গণতন্ত্রের বুলি আওরাচ্ছে। ভারতের জাতীয়তাবাদী চিন্তাভাবনা হিন্দু ধর্মের সমতুল্য হয়ে উঠছে ।
সঠিক বিশ্লেষন
ReplyDelete