গত ২৮ সেপ্টেম্বর ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক পি এফ আই এবং তার সহযোগী ৮ টি সংগঠনকে আগামী ৫ বছরের জন্য UAPA আইন দ্বারা ইন্ডিয়ান পেনাল কোড এর ১৫৩ A এবং ১৫৩ B দ্বারা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে । ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা NIA দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে ৭ টি ভিন্নরাজ্যের ২৭০ জন সদস্যকে হয় আটক নইলে গ্রেপ্তার করেছে। উপযুক্ত প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক 'দেশবিরোধী' কার্যকলাপএর তত্ব মূলত তুলে ধরেছে দেশবাসীর সামনে। এই মিথ্যাকে সত্য প্রমাণ করতে তাদের হয়ে দালালি করছে কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া হাউস গুলি । এই আক্রমণের মূল উদ্দেশ্য খুব স্পষ্ট - এক হাতে, মুসলিম সমাজকে সন্ত্রস্ত করা, অন্যদিকে তাদের রাজনৈতিক মতপ্রকাশে নির্ভীক যে কোনো সংগঠনকে 'সন্ত্রাসবাদী' ও 'দেশবিরোধী' তকমা দিয়ে প্রতিবাদের সমস্ত কণ্ঠ কে দমন করা ।
২ টি হত্যা মামলা সহ সদস্যের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ সংক্রান্ত ৫ টি মামলাকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে কেন্দ্রের ফ্যাসিস্ট বিজেপি সরকার পি এফ আই ও তার সহযোগী সংগঠন গুলির নিষিদ্ধকরণ এবং তাদের ৪০০ জন সদস্যের গ্রেপ্তারিকে ন্যায়সঙ্গত করতে চাইছে । যদি এই দুটি হত্যা মামলা ও অন্যান্য ৫ টি মামলা সত্য বলে প্রমাণিত হয় , তবুও UAPA এর মত গণতন্ত্র- পরিপন্থী আইনের মাধ্যমে সংগঠনগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা যুক্তিসম্মত ও ন্যায়সঙ্গত নয়।
এই ধরনের দমনমূলক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বিরোধীদের কণ্ঠস্বর রোধের প্রচেষ্টা আজ নতুন নয় । প্রসঙ্গক্রমে মনে রাখা উচিত বাজপেয়ী সরকারের আমলে সিমি এবং মনমোহন সিং সরকারের আমলে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি ( মাওবাদী) কে নিষিদ্ধ করার ঘটনা , কিংবা বর্তমান সরকারের দ্বারা কাশ্মীরের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই করতে থাকা JKLF কে নিষিদ্ধ করার ঘটনা । সম্প্রতি সিমি , ( SIMI - Student's Islamic Movement of India) - র ১২৭ জন কর্মী আদালতে বেকসুর খালাস হয়েছে ( সিমি আজ নিষিদ্ধ ) । আবার , ছত্তিশগড়ের বুর্কাপালের ' মাওবাদী হামলা '- র মিথ্যে মামলায় ৫ বছর জেলবন্দী থাকার পর ১২১ জন আদিবাসীকে বেকসুর খালাস করেছে সুপ্রিম কোর্ট । এরকম আরও বহু ঘটনার উদহারন রয়েছে যা একটাই কথা প্রমাণ করে -- বর্তমান ভারত রাষ্ট্রের যে সংসদীয় দলের হাতেই থাকুক , তারা একইরকম ভাবে তাদের বিরোধী এবং সমালোচকদের দমন করতে সঙ্কল্পিত।
মুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বর্তমান সমাজে আর্থ সামাজিক অবস্থার অবনতি নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে থাকে এমন এক সংগঠন হলো পি এফ্ আই । দলীয় ও আদিবাসী সহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঙ্গে বৃহত্তর সংহতি বজায় রেখে একটি ন্যায়সঙ্গত সমাজের দাবিতে লড়াই করছে তারা । পি এফ্ আই কে নিষিদ্ধকরণ করার মাধ্যমে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার আবারও তার মুসলিম বিদ্বেষের পরিচয় দিল এবং সুচতুরভাবে বিরোধীদের কণ্ঠস্বর রোধ করার মাধ্যমে নিজেদের 'হিন্দু রাস্ট্র' গড়ার উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত করতে আরও একধাপ এগিয়ে গেল ।
PFI সহ যে সকল সংগঠন গুলির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে তাদের মধ্যে National Confederation of Human Rights Organization ( NCHRO ) নামক একটি সংগঠন ও রয়েছে । NCHRO জন্মলগ্ন থেকে ভারতের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও প্রান্তিক অংশের মানুষের গণতান্ত্রিক ও নাগরিক অধিকার রক্ষা ও সুনিশ্চিত করার কাজ করে এসেছে । তাকে নিষিদ্ধ করার মানে হচ্ছে গণতান্ত্রিক ও নাগরিক অধিকার আন্দোলনের উপর বিজেপি - আরএসএস সরাসরি আক্রমণ নামিয়ে আনছে। আমাদের রাজ্যের তৃণমূল সরকারের কার্যকলাপেও একই ধরনের ঝোঁক দেখা দিচ্ছে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখে বিজেপির বিরোধিতা করলেও কাজে সে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি - আরএসএস এর সহায়ক শক্তি তা প্রমাণিত । আমরা দেখেছি কিভাবে পি এফ্ আই, NCHRO ও অন্যান্য সংগঠনগুলির নিষিদ্ধকরণের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি ( APDR ) সহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগঠনের যৌথ কর্মসূচি আয়োজন করার প্রচেষ্টা ভেস্তে দিতে সরব হয়েছে তৃণমূল সরকার -- মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর পুলিশ এই বিক্ষোভ কর্মসূচি গুমি বানচাল করতে গণআন্দোলনের কর্মীদের অন্যায় ভাবে গ্রেপ্তার করেছে । প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো সম্প্রতি চিন্তন শিবিরে নরেন্দ্র মোদি বন্দুকধারী নকশালদের পাশাপাশি রাষ্ট্রের নিশানা লক্ষ্য করেছে "কলমধারী নকশাল" দের বিরুদ্ধে । অর্থাৎ নাগরিক অধিকার নিয়ে সরব হওয়া যেকোনো আন্দোলন কর্মীর বা গণতন্ত্রপ্রেমী নাগরিকের প্রতিবাদী কণ্ঠকে UAPA এবং অন্যান্য দমনমূলক আইনে রোধ করার পথ আরো মসৃণ করতে 'কলোমধারি নকশাল ' তত্বের আমদানি ।
তথাকথিত 'বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র' ভারতবর্ষে বিরোধী কণ্ঠস্বর রোধ করতে ক্ষমতাশীল সমস্ত সরকারই সংবিধান সংস্করণ করে বিভিন্ন জনবিরোধী আইন পাশ করিয়েছে নিজেদের পাশাপশি কর্পোরেট পুঁজির স্বার্থ রক্ষার্থে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর রোধ করতে নিষেধাজ্ঞার রাজনীতিতে মত্ত হয়েছে। বিজেপি সরকার ২০২৪ এ পুনরায় ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই শাসক শ্রেণীর সবথেকে প্রতিক্রিয়াশীল অংশ হিসেবে নিজেকে প্রমাণিত করেছে । বাবরি থেকে গুজরাট থেকে দিল্লী - সর্বত্রই গণহত্যা সংগঠিত করেছে পাশাপাশি এই ব্রাহ্মণবাদী সরকার পুঁজিপতি আম্বান - আদানিদের স্বার্থ রক্ষার তাগিদে দেশের বৃহত্তর জনগণকে দরিদ্র সীমার নিচে অপুষ্টি , বেকারত্বের অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে।
এই অন্ধকার তবুও প্রবল সম্ভাবনাময় পরিস্থিতি মনে পড়ে হায়দ্রাবাদ জেলে বসে ১৯৭৭ সালে বিপ্লবী কবি চেরাবান্দা রাজুর লেখা এই কবিতাটি
'আমি জানি
ওদের ধর্ম আর শাসনের কোনো ' পবিত্র সুর '
আমার কণ্ঠনালীকে রেহাই দেবেনা
রেহাই দেবেনা আমার কণ্ঠস্বরকে।
এখন আমি আমার প্রতিটা রক্তের ফোঁটা
জন্মভূমিকে মুক্ত করার জন্য ছড়িয়ে দিচ্ছি
ছড়িয়ে দিচ্ছি বীজের মত ।'
Faad diya bro 💥
ReplyDeleteAur vi likhna hai
Deleteখুব সুন্দর লিখো তো তুমি। 👍
ReplyDeleteThank u 🌝
Deleteতুমি তো লেখক গো
ReplyDelete😬
Delete👍👍👍
ReplyDelete