দেশের যুবসমাজকে দৈনিক ১০ ঘণ্টা অর্থাৎ সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করার নিদান দিয়ে ইন্টারনেট দুনিয়ায় আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছেন ইনফোসিস (Infosys) এর প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণ মূর্তি ( Narayan Murthy)। ভারতবর্ষের মত একটি আধা সামন্ততান্ত্রিক এবং আধা ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রে মূর্তির মত একজন শোষক শ্রেণীর মানুষের কাছ থেকে এ হেন বক্তব্য পাওয়া যদিও নতুন কিছু বিষয় নয়। তবে তার এই সাম্প্রতিক বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনায় পরিনত হয়েছে।
মূর্তির মতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইলে যুবসমাজকে ১০ ঘণ্টা দৈনিক কাজ করতেই হবে। ভারতের মত একটি জনবহুল দেশের ব্যাপক প্রোডাকশন না হওয়াকে তিনি যুবদের ঘাড়ের উপর চাপিয়ে দিতে চাইছেন। এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি চীনের উদহারন টেনে জানিয়েছেন কিভাবে চীন এর জনগণ নাকি নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে শ্রম দিয়ে তাদের দেশেক বৃহৎ প্রযুক্তির দেশ বানিয়েছে যা নিতান্তই হাস্যকর।
এ প্রসঙ্গে তিনি নিজেও ভালো জ্ঞানী হলে নিশ্চয় শোষক শ্রেণীর মানুষ হয়ে তিনি ভারতবর্ষের জনগণকে জেনেবুঝে নিতান্তই ভুল ধারণা প্রদান করছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে এশিয়া সহ বিভিন্ন মহাদেশের ধীরে ধীরে ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি সরাসরি শোষন করা বন্ধ করলে স্বাধীনতার পরবর্তীকালে দুই দেশের অভিমুখ সম্পূর্ন ভিন্ন ছিল। চীনের জনগণ সর্বহারার মহান নেতা মাও সে তুং এর নেতৃত্বে সেই দেশে নয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন মার্কসীয় এবং লেনিনবাদ এর উন্নত ধারা মাওবাদ প্রবর্তন করে। মার্কসবাদী দের সর্বকালের স্লোগান হল ৮ "ঘণ্টার বেশি দৈনিক শ্রম কোনোমতেই না"। যা আমাদের মত আধা ঔপনিবেশিক এবং আধা সামন্ততান্ত্রিক রাষ্ট্রেও বহু সংগ্রামের ফলে চালু রয়েছে।
অন্যদিকে ভারতের অর্থনৈতিক অভিমুখ স্বাধীনতার পরেও রয়ে গেছে বিদেশি সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে। সেই সব সাম্রাজ্যবাদীদের প্রভুভক্ত হয়েই ভারতীয় মুৎসুদ্দি শ্রেণী রাষ্ট্রের যাবতীয় সম্পদ এবং শ্রম তাদের জন্য ব্যবহার করার পথ খুলে দেয়ার কাজ করে চলেছে। সুতরাং ভারতবর্ষের মত এত জনবহুল দেশের যুবদের অতিরিক্ত সময়ে খাটিয়ে রাষ্ট্রের হিতে তার কাজে লাগানোর কোনো উদ্দেশ্যই নারায়ন মূর্তির মত মুৎসুদ্দি শ্রেণীর নেই। বরঞ্চ ধনতান্ত্রিক দেশ (জাপান, আমেরিকা) গুলির কার্যপদ্ধতির তুলনা টেনে সস্তায় মজুরি দিয়ে যথাসম্ভব শ্রম এর লাভ সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে তুলে দিলেই তাদের স্বার্থসিদ্ধি ঘটবে বলতে কোনো সঙ্কচ থাকার কথা না।
If you have any doubt, pls let me know